কথা বলছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সভাপতি এবং বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসাইন আজিজী। ছবি : সংগৃহীত
আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করছি। আগামীকাল থেকে শ্রেণিকক্ষে ফিরবো। গত ৮ দিন শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে যেতে পারেননি। এটা আমাদের ন্যায্য দাবি ছিল। বার্ষিক পরীক্ষার আগ পর্যন্ত শনিবার স্কুল খোলা রাখব। যে আট দিন শ্রেণিকক্ষে যেতে পারিনি, সেই আট দিন পুষিয়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সভাপতি এবং বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসাইন আজিজী।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিনি এ ঘোষণা দেন।
দেলাওয়ার হোসাইন আজিজী বলেন, আমাদের বড় দাবি পূরণ হয়েছে। এটা আমাদের বড় বিজয়। আন্দোলন করে প্রজ্ঞাপন নিয়ে বাড়ি ফিরছি। আমরা চিন্তা করেছি সরকার তো শুধু আমাদের নিয়ে না, শিক্ষকদের মধ্যে আরো গ্রুপ আছে, স্বতন্ত্র আছে, নন-এমপিও আছে, সরকারিদের আছে, বিশ্ববিদ্যালয় আছে, অনেকেরই দাবি আছে। আবার সরকারের বাইরে আরো অনেক পেশাজীবী আছে, সবার বিষয়টা দেখতে হয়। সেই জায়গা থেকে ওনারা আমাদেরকে অনুরোধ করেছেন আপনারা যদি এগিয়ে আসেন আমরা বসে সমাধান করতে চাই। আমরা কিছু ছাড় দিয়েছি ওনারা কিছু ছাড় দিয়েছেন। আমাদের বড় যে দাবিটা, আলহামদুলিল্লাহ এটা প্রায় পূরণ হয়ে গেছে। আমাদের বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ করে প্রজ্ঞাপন করে আমার হাতে নিয়ে এসেছি।
এসময় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে, মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে জানানো হয়, সরকারের বিদ্যমান বাজেটের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা নিম্নোক্ত শর্তাদি পরিপালন সাপেক্ষে আগামী ১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে মূল বেতনের ৭.৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা) এবং ১ জুলাই ২০২৬ তারিখ থেকে উক্ত ৭.৫ শতাংশের অতিরিক্ত আরও ৭.৫ শতাংশ অর্থাৎ মূল বেতনের সর্বমোট ১৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা) নির্ধারণ করা হলো।
শর্তসমূহ হলো- (ক) পরবর্তী বেতনস্কেলে বর্ণিত অতিরিক্ত সুবিধাটি সমন্বয় করতে হবে। (খ) এমপিওভুক্ত ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা- ২০২১’ ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’; ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, কৃষি ডিপ্লোমা ও মৎস ডিপ্লোমা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’ এবং সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বা আদেশ বা পরিপত্র বা নীতিমালা অনুসরণপূর্বক নিয়োগের শর্তাদি পালন করতে হবে। (গ) বর্ণিত বাড়ি ভাতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক বা কর্মচারীগণ কোন বকেয়া প্রাপ্য হবেন না।
(ঘ) ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সকল আর্থিক বিধি-বিধান অবশ্যই পালন করতে হবে। (ঙ) এ ভাতাসংক্রান্ত বায়ে ভবিষ্যৎ কোন অনিয়ম দেখা দিলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ উক্ত অনিয়মের জন্য দায়ী থাকবেন। (চ) প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জি.ও জারি করে জি.ও-এর ৪ (চার) কপি অর্থ বিভাগে পৃষ্ঠাংকনের জন্য পাঠাতে হবে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু ৫ অক্টোবর ঘোষণাটি প্রকাশ্যে আসার পর শিক্ষক-কর্মচারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন। তাদের তিন দফা দাবি ছিল- মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা।
এসব দাবি আদায়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছিলেন। গত ১২ অক্টোবর থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
শিক্ষকদের এ অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ। সেদিন দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি চলাকালে পুলিশ শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শিক্ষক নিপীড়নের ঘটনায় তুমুল সমালোচনা চলে দেশজুড়ে। ১৩ অক্টোবর থেকে শুরু হয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি।
এ আন্দোলনের মধ্যে গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনরত শিক্ষকরা থালা-বাটি হাতে ‘ভুখা মিছিল’ নিয়ে শিক্ষা ভবনের দিকে অগ্রসর হন। হাইকোর্টের মাজার গেট এলাকায় পুলিশ তাদের আটকে দেয়। পরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান নিয়ে শিক্ষকরা গতকাল সোমবার থেকে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।

