25.7 C
Dhaka
Tuesday, July 8, 2025

যে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার নতুন শক্তি বাংলাদেশ

বিমসটেক (বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। সংগঠনটি সাতটি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভুটান ও নেপাল রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। তবে দীর্ঘ ২৮ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এর কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই সীমিত।

গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে এখন বাংলাদেশ। সম্প্রতি বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সম্পর্কের নতুন গতিপথের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নির্গমন- এই তিন লক্ষ্য সামনে রেখে বিমসটেক অঞ্চলের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চায়। তার মতে, যদি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পারস্পরিক আস্থা, সহযোগিতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করে, তবে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দক্ষিণ এশিয়া বর্তমানে একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। তিনি উল্লেখ করেন, নিজ দেশের জাতীয় স্বার্থের পাশাপাশি সবার স্বার্থের ভিত্তিতে কাজ করা উচিত। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দুরবস্থা এবং বৈষম্য দূর করার জন্য একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। যদি সহযোগিতা এবং বৈশ্বিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়, তবে এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ  নির্বাচনে কারা জয়ী হবে, যা বলছে বার্তা সংস্থা এএফপি

ড. ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ার যুবসমাজকে শক্তির উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যুবসমাজের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। যুবদের ক্ষমতায়ন এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে কৃষি, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে বিপ্লব আনা সম্ভব। তিনি বিমসটেক নেতাদের তরুণদের জন্য একটি পৃথক সভা আয়োজনের আহ্বান জানান, যাতে সদস্য দেশগুলোর তরুণরা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। এই ধরনের একটি যৌথ যুব উৎসব তরুণদের মধ্যে সহযোগিতা এবং সম্মিলন সৃষ্টি করবে, যা তাদের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করবে।

বিমসটেক অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত বিমসটেক গ্রিড সংযোগ চুক্তি এই ক্ষেত্রে একটি বড় মাইলফলক হতে পারে। তিনি বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন, যা এ অঞ্চলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

আরও পড়ুনঃ  আমরা বাঁধের মুখ খুলিনি, একাই খুলে গেছে: ভারত

বাংলাদেশ গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে। ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এই প্রবৃদ্ধির বড় উৎস হলো বাংলাদেশের জনসংখ্যা, শক্তিশালী গার্মেন্ট রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ। তবে এসব অর্জন সত্ত্বেও, বাংলাদেশ এখনো আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা এবং বিদেশি বিনিয়োগের উপর নির্ভরশীল। চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দৃশ্যে একটি প্রধান খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে এবং দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্রমশ বাড়ছে।

বিমসটেক সম্মেলনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রথমবারের মতো গৃহীত হয়েছে ব্যাংকক ভিশন ২০৩০, যা বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর ভবিষ্যৎ সহযোগিতার জন্য একটি বিস্তৃত রোডম্যাপ প্রদান করেছে। সম্মেলনে সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি এবং বিমসটেক ও আইওআরএ (ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন) ও জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।

সম্মেলনে ড. ইউনূসের বক্তব্যে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। যদিও চীনের প্রতি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের মেলবন্ধন নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশকে আগামী দিনে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কূটনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করে দক্ষিণ এশিয়ায় তার নেতৃত্ব শক্তিশালী করতে হবে। যদি বাংলাদেশ সফলভাবে এই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে, তবে দেশটি পুরো আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

আরও পড়ুনঃ  অপসারন করা হলো সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতিকে

বিমসটেক অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত বিমসটেক গ্রিড সংযোগ চুক্তি এই ক্ষেত্রে একটি বড় মাইলফলক হতে পারে। তিনি বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন, যা এ অঞ্চলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে। ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এই প্রবৃদ্ধির বড় উৎস হলো বাংলাদেশের জনসংখ্যা, শক্তিশালী গার্মেন্ট রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ। তবে এসব অর্জন সত্ত্বেও, বাংলাদেশ এখনো আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা এবং বিদেশি বিনিয়োগের উপর নির্ভরশীল। চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দৃশ্যে একটি প্রধান খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে এবং দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্রমশ বাড়ছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ