25.4 C
Dhaka
Monday, July 7, 2025

পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন, বিশ্বের কোথায় আছে এই ব্যবস্থা?

গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণের মতামতের যথাযথ প্রতিফলন। তবে অনেক সময় প্রচলিত ভোট পদ্ধতিতে দেখা যায়, একটি দল সীমিত ভোট পেয়েও অধিকাংশ আসনে জয়ী হয়ে যায়, আর অধিক ভোট পাওয়া দলের কোনো আসনই থাকে না। এমন বৈষম্য থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে বিশ্বের বহু দেশ গ্রহণ করেছে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা।

এই পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দল বা জোট যে পরিমাণ ভোট পায়, তার আনুপাতিক হারে সংসদে আসন পায়। ফলে গড়ে ওঠে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ।

কী এই পিআর পদ্ধতি?

উইকিপিডিয়ার ব্যাখ্যায়, আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে ভোটারদের রায় প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট প্রাপ্তির হার অনুযায়ী। উদাহরণস্বরূপ, কোনো দল যদি ১০% ভোট পায়, তাহলে সংসদে তাদের আসনও হবে প্রায় ১০% হারে।

আরও পড়ুনঃ  আমি এখনো ভোটে দাঁড়ালে জয়ী হবো: সাকিব

কেন প্রয়োজন?

বাংলাদেশসহ অনেক দেশে বর্তমানে প্রচলিত ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ (FPTP) পদ্ধতিতে যে দল বেশি আসনে জয় পায়, তারা সরকার গঠন করে, ভোটের মোট শতাংশ নয়। যেমন:

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৪০.৮৬% ভোট পেয়ে পেয়েছিল ১৯৩টি আসন, আর আওয়ামী লীগ ৪০.২২% ভোট পেয়ে মাত্র ৬২টি। (তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া)
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪% ভোট পেয়ে ২৩০টি আসন পেয়েছিল, আর বিএনপি ৩২.৫০% ভোট পেয়ে পেয়েছিল মাত্র ৩০টি। (তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া)
এমন পরিস্থিতিতে পিআর পদ্ধতি চালু থাকলে দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব আরও ভারসাম্যপূর্ণ হতো।

আরও পড়ুনঃ  আনসার বিশৃঙ্খলার নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাদের

বাস্তব উদাহরণ

ধরা যাক, চারটি দল একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একজন প্রার্থী ২৫% ভোট পেলেও বাকিরা মিলে ৭৫% ভোট পেলেও, প্রচলিত পদ্ধতিতে সেই ২৫% প্রার্থীই জয়ী হবে। অর্থাৎ ৭৫% ভোটের কোনো কার্যকর প্রতিনিধিত্ব থাকবে না।

পিআর পদ্ধতির প্রবর্তন ও বিস্তার

প্রথমবার ১৮৯৯ সালে বেলজিয়ামে চালু হয় পিআর পদ্ধতি।
বর্তমানে বিশ্বের ১৭০টি গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে ৯১টি, অর্থাৎ ৫৪% দেশে, পিআর ভিত্তিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
উন্নত দেশের সংগঠন ওইসিডি’র ৩৬টি দেশের মধ্যে ২৫টি, অর্থাৎ প্রায় ৭০% দেশ এই পদ্ধতি অনুসরণ করে।
পিআর পদ্ধতির ধরন

১. মুক্ত তালিকা পদ্ধতি: দলগুলো ভোটের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে আসন পায়।
২. বদ্ধ তালিকা পদ্ধতি: দল ঠিক করে দেয় কে হবেন সংসদ সদস্য।
৩. মিশ্র পদ্ধতি: কিছু আসনে প্রতীকভিত্তিক, কিছু আসনে পিআর ভিত্তিতে নির্বাচন হয়।

আরও পড়ুনঃ  ১৫ তারিখও চলে গেল, আপা তো আসলো না!

বাংলাদেশে পিআর চালুর আলোচনা

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে কিছু রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতি চালুর পক্ষে মত দিয়েছে।

উপসংহার

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা শুধু রাজনৈতিক ভারসাম্যই নয়, গণতন্ত্রকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর করার একটি বড় মাধ্যম। উন্নত বিশ্বের অভিজ্ঞতা ও দেশে বিভিন্ন নির্বাচনের বৈষম্যমূলক ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের এখন এ বিষয়টি নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ