জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনার সময় তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল নিক্ষেপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। আলোচিত এই ঘটনার পর অভিযুক্ত হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ইশতিয়াক হোসাইনকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে তার আইন অনুযায়ী তাকে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়েছে বলে জানায় ডিএমপি।
শুক্রবার (১৭ মে) রাতে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ১৪ মে (বুধবার) রাত প্রায় ১০টার দিকে কাকরাইল মসজিদ এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য আসেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ভিড় থেকে কে বা কারা একটি পানির বোতল ছুড়ে মারলে তা উপদেষ্টার মাথায় লাগে। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় এনে সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে ডিবি প্রাথমিকভাবে মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে ইশতিয়াক হোসাইনকে সনাক্ত করে।
পরে ১৫ মে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর আলুবাজার পুকুরপাড় এলাকার একটি মেস থেকে ইশতিয়াককে হেফাজতে নেয় ডিবি। সে সময় মেসের অন্য সদস্যদের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়। রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।
পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইশতিয়াকের বয়স, পেশা ও ব্যক্তিগত মানবাধিকারসহ আইনের বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। এতে কোনো ধরনের আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ১৬ মে দুপুরে ইশতিয়াক ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং ভবিষ্যতে এমন কাজে আর জড়াবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিতে রাজি হন।
এমন অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একই দিন বিকেলে তার পরিবারকে ডেকে পাঠিয়ে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ইশতিয়াককে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুরো বিষয়টি ডিবি অফিসে রক্ষিত সাধারণ ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলেও জানায় পুলিশ।
তবে ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শুক্রবার (১৬ মে) রাতে সাংবাদিকদের সামনে ইশতিয়াক অভিযোগ করেন, ‘আমাকে ২৬ ঘণ্টা আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।’ তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৪ মে রাতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ইশতিয়াক বোতল ছুড়ে মারলে তা সরাসরি উপদেষ্টার মাথায় আঘাত করে। ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এনসিপি নেতারা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং আইনগত পদক্ষেপের দাবি তোলেন।
এর প্রেক্ষিতে ১৫ মে বৃহস্পতিবার ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে পুলিশ এবং শুক্রবার তাকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়।