সম্প্রতি ইরানে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ভয়ংকর এক অভিযান পরিচালনা করে ইসরায়েল। অভিযানের শুরুতেই ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একসঙ্গে প্রাণ হারান ইরানের সেনাপ্রধানসহ অন্তত ২০ জন শীর্ষ কমান্ডার ও বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানী। এরপর টানা ১২ দিন পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র অবকাঠামো লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েল, যেখানে প্রাণহানি ঘটে ৮ শতাধিক মানুষের।
গত ১৩-২৪ জুন পর্যন্ত চলা এই অভিযানের প্রস্তুতি বহু বছর ধরেই নিচ্ছিল ইসরায়েল! এমন তথ্যই উঠে এসেছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর এক রিজার্ভ পাইলটের বয়ানে। ইরানের রাজধানী তেহরানে হামলা শেষে ঘাঁটিতে ফিরে এসে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ওই পাইলট। নিরাপত্তার কারণে তার পুরো নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালের পোস্ট ইসরায়েলি ওই পাইলটের পুরো বয়ান তুলে ধরেছে তাদের এক প্রতিবেদনে।
ইরানে পরিচালিত ১২ দিনের অভিযানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে ওই পাইলট জানান, অভিযান শুরু হওয়ার আগের রাতে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সম্মেলনে ছিলেন তিনি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার পরিবার, সহকর্মী ও অতিথিরা। ঠিক তখনই একটি বার্তা আসে– ‘আগামীকাল ভোরে স্কোয়াড্রনে রিপোর্ট করুন। ইরানে প্রতিরোধমূলক হামলা শুরু।’
সেই মুহূর্তের অনুভূতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার সামনে স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করতে হয়েছে, কারণ একটুও গোপন ফাঁস হলে পুরো মিশন ব্যর্থ হয়ে যেতে পারত।’
ভোরবেলা সন্তানদের চুমু দিয়ে বিদায় নেওয়ার সময় তার স্ত্রী তাকে শুধু বলেন, ‘যা করতেই হবে করো, আমরা আছি পাশে।’ স্ত্রীর সঙ্গে তখনকার আলিঙ্গনকে এক ধরনের অক্সিজেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইসরায়েলি ওই পাইলট বলেন, তেহরানকে এতটা কাছে থেকে আগে কখনও দেখা হয়নি। আকাশ থেকে শহরটাকে খুব শান্ত ও সুন্দর মনে হচ্ছিল। শহরটি নীরব। কেউ হয়তো নিচে আতঙ্কে ছিল, কিন্তু ওপর থেকে মনে হচ্ছিল নির্জন দুপুর।
তিনি আরও বলেন, ইরানের পাহাড়ঘেরা দৃশ্যগুলো ছিল শ্বাসরুদ্ধকর। এই অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে আমাদের দীর্ঘ সময় আকাশে থাকতে হয়েছে, মাঝপথে জ্বালানি ভরার মতো জটিল কাজও ছিল। পুরো সময়জুড়ে রেডিও নীরবতা বজায় রাখতে হয়, যেন কেউ অপারেশনের তথ্য বুঝে না ফেলে।
ওই পাইলট বলেন, ‘আমরা জানতাম, শত্রু শুধু বিপজ্জনকই নয়, অত্যন্ত চতুরও। তাই প্রতিটি সম্ভাব্য ত্রুটি ও আক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই ফ্লাইট পরিকল্পনা করা হয়েছিল।’
ইরানে হামলা চালিয়ে ফিরে এসে মাটিতে অবতরণ করেই ইসরায়েলি ওই পাইলট বলেন, ইসরায়েলিদের প্রযুক্তি, দক্ষতা, সাহস সবকিছুই এই মিশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। যদি আমরা ঐক্য ও শিক্ষার ওপর এই মনোযোগ দিতে পারি, তাহলে আরও অনেক কিছু সম্ভব।
সবশেষে তিনি ইরানিদের উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করি না। আমরা হামলা করেছি তাদের বিরুদ্ধে, যারা আমাদের ধ্বংস করতে চায়। একদিন শান্তি আসবে, আমরা একসঙ্গে উন্নতি করব।