25 C
Dhaka
Tuesday, July 8, 2025

বিসিএসের গেজেট থেকে বাদ পড়ায় ভেঙে যায় বিয়ে, হতাশায় আত্মহত্যার চেষ্টা

৪৩তম বিসিএসের দ্বিতীয় গেজেট থেকে বাদ পড়ার পর থেকেই হতাশ ছিলেন ফেরদৌস ইসলাম। গেজেট থেকে বাদ পড়ার পর তার বিয়ে ভেঙে যায়। সবকিছু নিয়েই মানসিক বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি। হতাশা থেকেই করেছিলেন আত্মহত্যার চেষ্টাও।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাতে দ্যা ডেইলি ক্যাস্পাসকে কথাগুলো জানান ৪৩তম বিসিএসের গেজেট বঞ্চিত ফেরদৌস ইসলাম। গত বুধবার নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। ঘরের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন বড় ভাই। এরপর দ্রুত সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে বাড়িতে রয়েছেন তিনি।

ফেরদৌস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ সেশনের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা-মা বেঁচে নেই। ৪৩তম বিসিএসে চূড়ান্ত সুপারিশের পর গেজেটভুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে দ্বিতীয় গেজেট থেকে বাদ পড়ে যান। এরপর দীর্ঘদিন ধরে গেজেটবঞ্চিতদের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  এখনও চাকরি ফিরে পাননি বিবৃতি না দেওয়া সেই আইন কর্মকর্তা

ফেরদৌস ইসলাম জয়পুরহাটের ধমুরহাট উপজেলার সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ মাদ্রাসায় নিয়োগ পান তিনি । সহকারী শিক্ষক হিসেবে চিকিৎসা ভাতা ও বাড়ি ভাড়াসহ তিনি ১৩ হাজার ৭৫০ টাকা বেতন পান। তবে ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা লোন নেওয়ায় বেতন থেকে প্রতিমাসে ৯ হাজার ১০০ টাকা কেটে রাখা হয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে নিজের খরচ চালান ফেরদৌস।

ফেরদৌস বলেন, ‘২০১৯ সালে এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার পরীক্ষায় প্রিলি ও রিটেন পাশ করেছিল ফেরদৌস। কিন্তু ভাইভার পরে গোপন ভেরিফিকেশনে জয়পুরহাটে বিএনপি-জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে তাকে বাদ দেওয়া হয়। ৪০তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিল সে। ৪৩তম বিসিএসে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রিলি, লিখিত এবং ভাইভায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিক্ষা ক্যাডারে সুপরিশপ্রাপ্ত হই। এরপর এক মেয়ের সাথে পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে ঠিক হয়। সবকিছু ঠিক ছিল। মেয়েটিকে আমি অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তবে গেজেট থেকে বাদ দেওয়ায়র খবরে তার পরিবার বিয়ে ভেঙে দেয়।’

আরও পড়ুনঃ  টাকার বিনিময়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন ‘প্রভাবশালীরা’, বদলাচ্ছেন পরিচয়

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে নেতিবাচক কোনো কিছু না থাকায় গত বছরের ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসে গেজেটেড হই। তবে সুপারিশপ্রাপ্তদের পুনরায় ডিজিএফআই ও এনএসআই ভেরিফিকেশনে আটকে যায় আমার ভাগ্য। গেজেট থেকে বাদ পড়ে যাই। অন্ধকার নেমে আসে আমার জীবনে। গত সপ্তাহে আমাদের গেজেট হওয়ার কথা ছিল। তবে সেটি না হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। এই হতাশা থেকে আত্মহত্যার পদক্ষেপ নেই।’

২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে সেই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে গত ৩০ ডিসেম্বর নতুন করে আবার প্রজ্ঞাপন জারি হয়। নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়েন ১৬৮ জন। বাদ পড়াদের মধ্যে ছিলেন ফেরদৌস ইসলামও। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশপ্রাপ্ত ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারের প্রবেশ পদে নিয়োগ দেওয়া হলো। এসব প্রার্থীকে ১৫ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দিতে হবে।’

আরও পড়ুনঃ  আলজাজিরার যে রিপোর্ট লুকাতে চেয়েছিলেন হাসিনা

৪৩তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ১৬৩ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন। সুপারিশের দীর্ঘ ১০ মাস পর ১৫ অক্টোবর যে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছিল, সেখানে বিভিন্ন ক্যাডারে বাদ পড়েছিলেন ৯৯ জন।

এর আগে ৪১তম বিসিএসের গেজেট থেকে বাদ পড়েন ৬৭ জন, ৪০তম বিসিএস থেকে ৩৪ জন, ৩৭তম বিসিএস থেকে ৬১ জন, ৩৮তম থেকে ৭৫ জন এবং ৩৬তম থেকে ৩৮ জন বাদ পড়েছিলেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ